নীতিমালা
কিনলে আইটির নীতিমালা, গোপনীয়তা নীতি ও শর্ত এর সাথে একমত প্রসঙ্গে
১. কিনলে আইটি কি?
“কিনলে আইটি” একটি উদীয়মান প্রতিষ্ঠান, যা মূলত একটি ব্লগিং হাউস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীল জগতে এই প্রতিষ্ঠানটি তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যবসা, উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি ও সরবরাহ করে। পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য প্রাসঙ্গিক এবং উপকারী তথ্য তুলে ধরার লক্ষ্যে কিনলে আইটি কাজ করে যাচ্ছে। ব্লগিং এর মাধ্যমে পাঠকদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে সহায়তা করে, একইসঙ্গে প্রযুক্তিগত সমাধান, ব্যবসায়িক কৌশল এবং ডিজিটাল দুনিয়ার আধুনিক ধারা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
২. কিনলে আইটির নীতিমালা
ইন্টারনেটে ব্লগিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ব্লগ সাইট তৈরির মাধ্যমে যেকোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড, কিংবা পেশাদার কনটেন্ট নির্মাতা তার ভক্ত ও গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। তবে, ব্লগ সাইটের কার্যকারিতা ও সঠিক ব্যবহারের জন্য একটি নীতিমালা থাকা জরুরি।
ব্লগ নীতিমালা ব্লগারের উদ্দেশ্য, ব্যবহারকারীদের আচরণ, এবং কনটেন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করে দেয়। এতে ব্লগার এবং পাঠকদের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সাইটটি পেশাদারিত্ব বজায় রাখে।
এই আর্টিকেলে ব্লগ সাইটের জন্য কিভাবে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হয় এবং কোন কোন বিষয়গুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ক) ব্লগের উদ্দেশ্য ও দর্শন নির্ধারণ
প্রথমেই ব্লগের উদ্দেশ্য এবং দর্শন স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্লগের কনটেন্টের ধরণ এবং টার্গেট অডিয়েন্সকে নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি শিক্ষামূলক ব্লগ সাইটের উদ্দেশ্য হতে পারে পাঠকদের শিক্ষামূলক কনটেন্ট প্রদান করা, যেখানে টেকনিক্যাল বা আইটি ভিত্তিক ব্লগের উদ্দেশ্য হতে পারে প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শ প্রদান।
অংশ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন:
ব্লগের উদ্দেশ্যঃ এটি সাধারণত পাঠকদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়। এটি ব্লগের মূল লক্ষ্য কী, তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে।
লক্ষ্য শ্রোতাঃ টার্গেট পাঠকদের নির্ধারণ করে নেওয়া, তাদের বয়স, পেশা, বা আগ্রহভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ।
ব্লগের কাঠামোঃ কনটেন্টের ধরণ, যেমন টিউটোরিয়াল, খবর, মতামত, রিভিউ ইত্যাদি।
খ) কনটেন্ট নীতিমালা
ব্লগের নীতিমালায় কনটেন্ট সম্পর্কিত সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। ব্লগারকে কী ধরণের কনটেন্ট তৈরি করতে হবে, কিভাবে তা লিখতে হবে, এবং কী ধরণের কনটেন্ট ব্লগে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না, তা এখানে উল্লেখ করা হয়।
উপাদানসমূহঃ
কপিরাইট ও মৌলিকতাঃ প্রতিটি ব্লগ পোস্টের মৌলিক হতে হবে এবং অন্য কোনো সাইট বা মাধ্যম থেকে কপি করা যাবে না। যদি কোনো উৎস থেকে তথ্য নেওয়া হয়, সঠিকভাবে ক্রেডিট দিতে হবে।
ভাষার ব্যবহারঃ ব্লগের ভাষার শুদ্ধতা, সম্মানজনক শব্দচয়ন এবং পাঠকদের জন্য গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ করতে হবে। অশালীন, আপত্তিকর বা আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।
গবেষণাভিত্তিক লেখাঃ তথ্যের সঠিকতা এবং গ্রহণযোগ্য উৎস থেকে প্রমাণিত উপাত্ত ব্যবহার করতে হবে।
অশ্লীল ও আপত্তিকর কনটেন্ট নিষিদ্ধঃ ব্লগে কোনো রকমের আপত্তিকর, আক্রমণাত্মক, বর্ণবাদী, যৌন উত্তেজনামূলক বা ঘৃণাসূচক কনটেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
গ) মন্তব্য নীতিমালা
পাঠকদের মন্তব্য করার সুযোগ থাকলে, তা একটি শক্তিশালী পাঠকশ্রেণী গড়ে তোলে। তবে, মন্তব্য সিস্টেম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কিছু নীতিমালা থাকা দরকার।
উল্লেখযোগ্য বিষয়ঃ
মন্তব্যের ভাষাঃ মন্তব্যের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের সম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করতে হবে এবং অশ্লীল বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য নিষিদ্ধ থাকবে।
স্প্যামিং ও বিজ্ঞাপনঃ মন্তব্যের মাধ্যমে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন, স্প্যামিং বা অপ্রাসঙ্গিক লিংক শেয়ার করা যাবে না।
মডারেশনঃ ব্লগার যদি মন্তব্যের উপর মডারেশন করতে চান, তবে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানানো উচিত। মডারেশন নীতিমালার অংশ হিসেবে, কোন মন্তব্য প্রকাশিত হবে এবং কোনটি মুছে ফেলা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।
ঘ) ব্লগ পোস্টের অনুমোদন ও প্রকাশনা
ব্লগে কোনো পোস্টের আগে তা যাচাই করা এবং নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী তা প্রকাশের জন্য অনুমোদন প্রক্রিয়া থাকা উচিত। এই নীতিমালায় উল্লেখ থাকতে পারে:
সম্পাদনা ও পর্যালোচনাঃ ব্লগের প্রতিটি পোস্ট নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী সম্পাদনা এবং পর্যালোচনা করতে হবে।
প্রকাশের নিয়মঃ পোস্ট প্রকাশের সময়সীমা এবং কতদিনের মধ্যে কোনো পোস্ট প্রকাশ করা হবে, তা উল্লেখ করা।
বিষয়বস্তু নির্বাচনঃ কোন বিষয়ের উপর লেখা প্রকাশ করা যাবে এবং কোনগুলোতে ব্লগে স্থান দেওয়া যাবে না তা নির্ধারণ করা।
ঙ) গোপনীয়তা ও ডেটা সুরক্ষা
ব্লগ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট গোপনীয়তা নীতিমালা থাকা উচিত, যা ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশিকা প্রদান করে।
গোপনীয়তা নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন:
তথ্য সংগ্রহঃ ব্লগ সাইট কী ধরনের ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করবে, যেমন নাম, ইমেইল ঠিকানা, ইত্যাদি।
তথ্য সংরক্ষণঃ ব্যবহারকারীদের তথ্য কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে এবং কতদিন পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে।
তৃতীয় পক্ষের সাথে শেয়ারঃ ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া তাদের তথ্য কোনো তৃতীয় পক্ষের সাথে শেয়ার করা হবে না।
চ) বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরশিপ নীতিমালা
ব্লগে যদি বিজ্ঞাপন বা স্পন্সরশিপের সুযোগ থাকে, তবে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা উচিত। পাঠককে স্পষ্টভাবে জানানো উচিত যে ব্লগের কনটেন্ট এবং বিজ্ঞাপনের মধ্যে পার্থক্য কী।
বিজ্ঞাপন প্রকাশঃ ব্লগে কী ধরনের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হবে এবং কিভাবে তা প্রদর্শিত হবে।
স্পন্সরশিপ ও অ্যাফিলিয়েট লিংকঃ স্পন্সরকৃত কনটেন্ট বা অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করা হলে, তা সম্পর্কে স্বচ্ছভাবে পাঠকদের জানাতে হবে।
স্বাধীন মতামতঃ ব্লগারের স্বাধীন মতামত নিশ্চিত করতে হবে যাতে স্পন্সর বা বিজ্ঞাপনদাতার প্রভাব পড়ে না।
ছ) দায়িত্ব ও প্রতিকার
ব্লগে প্রদত্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করে পাঠকরা সিদ্ধান্ত নিলে, ব্লগারকে কখনো কখনো দায়বদ্ধতার বিষয়টি উল্লেখ করতে হতে পারে। এ কারণে ব্লগে একটি দায়িত্ব অস্বীকার নীতিমালা থাকা জরুরি।
দায়িত্ব অস্বীকার নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন:
ব্লগে দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোনো ক্ষতি বা আর্থিক ক্ষতি হলে, ব্লগার তার জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন না।
ব্লগে দেওয়া পরামর্শগুলো সাধারণ এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ পরামর্শের জন্য ব্যবহারকারীদের প্রফেশনালদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
জ) অধিকার সংরক্ষণ নীতিমালা
ব্লগের সব কনটেন্টের স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত থাকার বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা উচিত। ব্লগার বা ব্লগের মালিক কোনো কনটেন্ট বা তথ্য ব্যবহার করার অধিকার সংরক্ষণ করবেন কি না, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
কপিরাইট অধিকারঃ ব্লগে থাকা সমস্ত কনটেন্টের মালিকানা কার, তা স্পষ্ট করতে হবে।
ব্লগ কনটেন্টের পুনঃপ্রকাশ: ব্লগের কোনো কনটেন্ট যদি অন্য কোথাও পুনঃপ্রকাশ করা হয়, তবে তা কিভাবে করতে হবে এবং অনুমতি গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাতে হবে।
ঝ) নিরাপত্তা নীতিমালা
ব্লগ সাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইটে থাকা ব্যবহারকারীর তথ্য, লগইন ডেটা, এবং অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা নীতিমালা থাকা উচিত।
পাসওয়ার্ড নিরাপত্তাঃ ব্লগ ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সাইট সুরক্ষাঃ সাইটে যেকোনো ধরনের সাইবার আক্রমণ থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
ঞ) পরিবর্তন ও সংশোধন নীতিমালা
সময়ের সাথে সাথে ব্লগের নীতিমালা পরিবর্তন হতে পারে। এ ধরনের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত, যা ব্যবহারকারীদের নীতিমালার যে কোনো পরিবর্তন বা সংশোধনের বিষয়ে জানিয়ে দেয়। এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
নীতিমালা পরিবর্তনঃ ব্লগ সাইটের মালিক যেকোনো সময় নীতিমালা পরিবর্তন বা সংশোধন করার অধিকার রাখবেন।
ব্যবহারকারীদের অবগতকরণঃ নীতিমালা পরিবর্তন হলে, ব্যবহারকারীদের কীভাবে তা জানানো হবে। উদাহরণস্বরূপ, ইমেইল নোটিফিকেশন বা সাইটে ঘোষণা পোস্ট করা যেতে পারে।
প্রযোজ্য তারিখঃ নতুন নীতিমালা কার্যকর হওয়ার তারল্লেখ করা।
উপসংহার
ব্লগ সাইটের নীতিমালা একটি সাইটের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং পাঠকদের সাথে সঠিক যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্লগার এবং পাঠকদের মধ্যে একটি নির্ভরযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং সাইটের পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে। নীতিমালার সব অংশই ব্লগের চরিত্র ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা উচিত, যাতে ব্লগটি কার্যকর ও সফল হয়।
কিনলে আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url