প্রতিদিন আমলকি খেলে কি হয়? আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি তা জানতে হলে তার ্মআগে জানতে হবে আমলকি কি? আমলকি (Emblica officinalis), যা আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ
হিসেবে ব্যবহৃত হয় একটি ঔষধি ফল।
এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং পুষ্টিগুণ থাকে। আমলকি সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজমশক্তি উন্নত করা, এবং ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়। আমলকির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলকে নিরসন করে
ক্যান্সারসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
পেজ সূচিপত্র ঃপ্রতিদিন আমলকি খেলে কি হয়? আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
প্রতিদিন আমলকি খেলে কি হয়
প্রতিদিন আমলকি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। এতে প্রচুর ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। আমলকি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে, যা শরীরের কোষগুলোর ক্ষতি কমিয়ে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি বয়সের ছাপ দূর করতে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে, ফলে আপনি আরও তরুণ ও সুস্থ বোধ করতে পারেন।
আমলকি খেলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করার স্তর স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক। এ ছাড়াও, আমলকি হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা অম্বলের মতো সমস্যা দূর করে। হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকার ফলে শরীরে পুষ্টি সহজে শোষিত হয়, যা সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
তবে প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার কিছু সতর্কতাও আছে। অতিরিক্ত আমলকি খেলে গ্যাস্ট্রিক বা পেটের অস্বস্তি হতে পারে, কারণ এটি স্বাদে টক এবং এতে উচ্চমাত্রায় এসিডিক উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে যারা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন বা ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আমলকি খাওয়া নিরাপদ। সাধারণত পরিমিত পরিমাণে আমলকি খেলে এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা পুরোপুরি পাওয়া যায় এবং শরীর সুস্থ থাকে।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঃ
আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
সাহায্য করে। এই ভিটামিন শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং মুক্ত
র্যাডিকেল থেকে শরীরকে রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমলকি সাদা
রক্তকণিকা এবং অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে, যা বিভিন্ন ভাইরাস ও
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।
২. ত্বকের জন্য উপকারী ঃ
আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকায় এটি ত্বকের
কোষগুলোকে সজীব রাখে। আমলকি ত্বকের বলিরেখা ও সূক্ষ্ম রেখা দূর করতে সহায়ক,
কারণ এটি কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে টানটান রাখে। নিয়মিত আমলকি খেলে ত্বক
উজ্জ্বল এবং মসৃণ হয়। এছাড়া, আমলকি ত্বকের সংক্রমণ, ফুসকুড়ি, এবং ব্রণ
প্রতিরোধে কার্যকর।
৩. চুলের জন্য উপকারী ঃ
আমলকি চুলের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে,
চুলের পাকা ও খুশকি কমাতে সহায়ক। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি ও অন্যান্য খনিজ
পদার্থ চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং চুলের পুষ্টি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
চুলে আমলকি তেল ব্যবহার করলে চুলের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ে।
৪. হজমশক্তি উন্নত করা ঃ
আমলকি হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে
সহায়ক। এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক
সমস্যা হ্রাস করে। এটি খাবারের পুষ্টি ভালোভাবে শোষণ করতে সাহায্য করে এবং
পাচনতন্ত্রের ক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে।
৫. ওজন কমানো ঃ
আমলকি মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমা কমায়। এতে ক্যালোরির
পরিমাণ কম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে,
যা ওজন কমাতে সহায়ক।
৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ঃ
আমলকির উপাদানগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমলকি ইনসুলিনের কার্যকারিতা
বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া, এতে থাকা ক্রোমিয়াম রক্তে শর্করার মাত্রা
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য আমলকি একটি কার্যকর
প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
৭. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক ঃ
আমলকি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এতে
উপস্থিত পলিফেনল রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL)
বাড়ায়। আমলকি রক্তের চাপ কমাতে সহায়ক এবং হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে
সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকি খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে।
৮. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ঃ
আমলকি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং
ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক। এতে ফ্রি র্যাডিকেল প্রতিরোধী উপাদান
রয়েছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আমলকি খেলে
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
আমলকি খাওয়ার অপকারিতা
১. অ্যাসিডিটির সমস্যা ঃ
যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের জন্য আমলকি খাওয়া সমস্যা তৈরি করতে
পারে। আমলকিতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি ও অ্যাসিডিক উপাদান থাকার কারণে এটি পেটে
অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দিতে পারে। খালি পেটে আমলকি খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা
বাড়তে পারে।
২. রক্তপাতের ঝুঁকি ঃ
আমলকি রক্ত পাতলা করে এবং সার্কুলেশন উন্নত করে। তবে, যাদের রক্তপাতের সমস্যা আছে
বা যারা অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ওষুধ সেবন করেন, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে
পারে। কারণ এটি রক্তপাতের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তাই এমন ব্যক্তিরা চিকিৎসকের
পরামর্শ ছাড়া আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩. রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে ঃ
আমলকি রক্তচাপ কমাতে সহায়ক, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ভালো। তবে যাদের
নিম্ন রক্তচাপ আছে তাদের ক্ষেত্রে এটি সমস্যার কারণ হতে পারে।
৪. পেটে গ্যাস বা অম্বল সৃষ্টি করতে পারে ঃ
বেশি পরিমাণে আমলকি খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা, অম্বল, পেট ব্যথা ইত্যাদি হতে
পারে। কারণ আমলকি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং পেটে একধরনের অস্বস্তিকর চাপ তৈরি করতে
পারে।
৫. কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে ঃ
আমলকিতে অক্সালেট নামে এক ধরনের পদার্থ রয়েছে, যা কিডনির পাথরের সমস্যা বাড়াতে
পারে। তাই কিডনির সমস্যা থাকলে নিয়মিত আমলকি খাওয়া এড়িয়ে চলা ভালো।
৬. অতিরিক্ত ডায়রিয়া হতে পারে ঃ
অনেক সময় বেশি আমলকি খেলে পেটের সমস্যা, বিশেষ করে ডায়রিয়া বা হালকা পেট খারাপ
হতে পারে। এর ফাইবার এবং ভিটামিন সি বেশি হলে হজম প্রক্রিয়া একটু ব্যাহত হতে
পারে।
আমলকি কোন সময় খাওয়া ভাল
আমলকি খাওয়ার সঠিক সময় নির্বাচন করলে এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা আরও ভালোভাবে পাওয়া সম্ভব। সাধারণত সকালে খালি পেটে আমলকি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। খালি পেটে আমলকি খেলে শরীর সহজেই এর ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে পারে। এটি হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করে। এছাড়া খালি পেটে আমলকি খেলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রভাব বাড়ে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক।
দুপুরের খাবারের পরেও আমলকি খাওয়া যেতে পারে। দুপুরে খাবারের পরে এটি খেলে খাবারের পুষ্টি উপাদান আরও ভালোভাবে হজম হয় এবং শরীরে শোষিত হয়। এটি দুপুরের খাবারের পর কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্বল ও হজমের সমস্যাও কমাতে সাহায্য করে। দুপুরের খাবারের পর আমলকি খেলে দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শরীরে শক্তির মাত্রা বজায় থাকে এবং কাজের উদ্যম পাওয়া যায়।
রাতে আমলকি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আমলকি এসিডিক হওয়ায় এটি রাতে খেলে কিছু মানুষের গ্যাস্ট্রিক বা অম্বল হতে পারে। তবে, হালকা খাওয়ার পরে পরিমিত পরিমাণে আমলকি খেলে এ ধরনের সমস্যা হয় না। রাতে ঘুমের আগে খেলে এটি শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের করতে সহায়তা করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে। তবে কারো যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে, তাহলে রাতে আমলকি এড়িয়ে চলা উচিত।
আমলকিতে কোন কোন উপাদান রয়েছে
আমলকিতে প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে, যা শরীরের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি প্রধানত ভিটামিন সি-এর বিশাল উৎস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। একমাত্র আমলকি থেকেই আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর বড় একটি অংশ পাওয়া যায়। এছাড়া আমলকিতে পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্থোসায়ানিনস রয়েছে, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কোষের ক্ষয়রোধে সহায়ক।
আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। ফাইবার সমৃদ্ধ এই ফলটি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, ফলে হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে এবং শরীরের অন্যান্য পুষ্টি শোষণ প্রক্রিয়া সহজ হয়। এছাড়া আমলকিতে ক্রোমিয়াম নামক খনিজ উপাদান রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
আমলকিতে আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম, যা হাড়ের সুস্থতায়, রক্তের স্বাভাবিক সঞ্চালনে এবং স্নায়ুর কার্যকারিতায় সহায়তা করে। এই খনিজগুলো হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এছাড়া এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক এবং সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে ভূমিকা রাখে।
আমলকি খেলে খাবারের চাহিদা বাড়ে
আমলকি খেলে খাবারের চাহিদা বা ক্ষুধা বাড়তে পারে, কারণ এটি হজমশক্তি উন্নত করে এবং পেটকে সুস্থ রাখে। আমলকিতে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়তা করে, যা খাদ্যের সঠিক শোষণ নিশ্চিত করে। এতে করে শরীরে পুষ্টি উপাদানগুলোর ঘাটতি পূরণ হয় এবং ক্ষুধা বাড়ে। বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য বা অম্বল থাকলে, আমলকি খেলে এই সমস্যা দূর হয় এবং খাবারের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বাড়ে।
আমলকি খেলে পাকস্থলীর জুস বা গ্যাস্ট্রিক রসের নিঃসরণ বাড়ে, যা খাবার হজমে সহায়তা করে এবং ক্ষুধার উদ্রেক ঘটায়। পাকস্থলীতে এনজাইমের নিঃসরণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শরীরে খাবার দ্রুত হজম হয়, ফলে খাদ্যের প্রভাব ও উপকারিতা দ্রুত দেখা যায়। এভাবে, যাদের ক্ষুধা কম, বিশেষত ছোট শিশু বা বয়স্করা নিয়মিত আমলকি খেলে তাদের ক্ষুধা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তারা আরও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার দিকে আগ্রহী হতে পারেন।
আমলকিতে ক্রোমিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন রয়েছে, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং শরীরের মেটাবলিজমকে উন্নত করে। মেটাবলিজমের এই বৃদ্ধির ফলে শরীরে দ্রুত শক্তির চাহিদা তৈরি হয় এবং নতুন করে খাবার গ্রহণের ইচ্ছা বাড়ে। এ কারণে নিয়মিত আমলকি খেলে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি কমে, এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ ও ক্ষুধা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
আমলকি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
আমলকি খাওয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে এর পুষ্টিগুণ সঠিকভাবে উপভোগ করা যায় এবং শরীরের জন্য উপকারী হয়। সঠিক সময় এবং পরিমাণে আমলকি খাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সকালে খালি পেটে আমলকি খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। খালি পেটে এটি হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরে থাকা টক্সিনগুলো বের করে দেয়। পাশাপাশি, আমলকির ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো দ্রুত শোষিত হয়, যা শরীরের শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আমলকি খাওয়ার সঠিক পরিমাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশি পরিমাণে আমলকি খেলে গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যাও হতে পারে, কারণ এটি টক এবং এসিডিক। সাধারণত প্রতিদিন ১-২টি আমলকি বা তার সমপরিমাণ রস খাওয়াই যথেষ্ট। যদি আপনি আমলকি রস খেতে চান, তাহলে ১ চা চামচ রস এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খাওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করবেন।
রাতে আমলকি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, কারণ এর এসিডিক গুণ হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে, খাবারের পরে হালকা পরিমাণে আমলকি খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। বিশেষত, আমলকি খাওয়ার পর জলপান করা ভালো, কারণ এটি শরীরের তরল ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।
আমলকি খাওয়ার সতর্কতা
১. প্রতি দিন পরিমাণে খাওয়া ঃ
প্রতিদিন বেশি পরিমাণে আমলকি খেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হতে পারে। প্রতিদিন
এক থেকে দুই টুকরো তাজা আমলকি বা এক টেবিল চামচ আমলকির রস খাওয়া যথেষ্ট।
২. খালি পেটে না খাওয়াঃ
খালি পেটে আমলকি খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে। খাবারের সাথে বা খাবারের
পর খেলে এ সমস্যা এড়ানো যায়।
৩. রোগ অনুযায়ী সেবনঃ
দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি থাকলে
আমলকি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
৪. অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণ এড়ানোঃ
অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীরের পক্ষে ভালো নয়, তাই নিয়মিত পরিমাণ বজায় রাখুন।
উপসংহার
আমলকি একটি পুষ্টিকর এবং ঔষধি ফল যা শরীরের জন্য অনেক উপকারি, তবে সঠিক পরিমাণে
এবং সঠিকভাবে খেতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, হজমশক্তি উন্নত করা, ত্বক ও
চুলের যত্ন, ওজন নিয়ন্ত্রণ, এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে এটি বিশেষভাবে উপকারী।
তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা এড়ানোর জন্য প্রতিদিন
নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত।
এই সংক্রান্ত বিষয়াবলী সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুন
কিনলে আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url